বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের জনগণ প্রজা নন, সাংবিধানিকভাবে মালিক। গণপ্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ঔপনিবেশিক মানসিকতার স্যার শব্দটি ক্ষমতা প্রকাশ করে, তাদের স্যার নাকি ভাই বলতে হবে, তার নীতিমালা প্রকাশের জন্য নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়েছে।
‘স্যার না বলায়’ জেলা প্রশাসকের ক্ষুব্ধ আচরণ, প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের অবস্থান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ যুক্ত করে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করা হয়।
স্যার-ম্যাডাম-মাই লর্ড-সম্বোধনে ঔপনিবেশিকতা সংক্রান্ত মতামত কলাম যুক্ত করে দেশপ্রেমিক ও মানবাধিকারকর্মী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুঃ আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া আবেদনকারী হিসেবে রিটটি করেন।
রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে। রিটের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আইনজীবী মুঃ আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া নিজে।
তিনি জানান, সম্বোধনের এমন মাহাত্ম প্রায় দুশো বছরের ব্রিটিশ উপনিবেশে থাকা ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে পৃথিবীর অন্য কোথাও দৃশ্যমান হয় না। প্রজাতন্ত্রের সরকারি কর্মচারী কর্তৃক জনগণের মুখ দিয়ে ‘স্যার’, ‘মেম’, ‘সাহেব’ কিংবা বিচারালয়ে বিচারককে ‘মাই লর্ড’ সম্বোধনে প্রকট হয়ে উঠেছে।
‘স্যার’ (Sir) শব্দটি ইংরেজি হলেও এটির উৎপত্তি মধ্যযুগের ফরাসি দেশে ফ্রেঞ্চ শব্দ ‘স্যায়ার’ (Sire) থেকে, সেখানে জমিদার বা সামন্ত প্রভুদের প্রজারা সম্বোধন করত ‘স্যায়ার’ বলে। Are We Still Slaves?– শিরোনামের এক নিবন্ধে ভারতীয় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও লেখক উদয়লাল পাই দাবি করেছেন, ফরাসি দেশে সামন্তযুগে SIR শব্দ দ্বারা বুঝানো হত- Slave I Remain, আর ইংল্যান্ডে রাজকীয় নাইট উপাধিপ্রাপ্তদের নামের আগে ব্যবহৃত SIR শব্দ দ্বারা নির্দেশ করে- Servant I Remain. SIR শব্দটি ইংরেজি ভাষায় ব্যবহৃত হওয়া শুরু করে ১২৯৭ সাল থেকে যখন ব্রিটিশ রাজতন্ত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য ‘নাইট’ উপাধিপ্রাপ্তদের নামের পূর্বে ‘স্যার’ যুক্ত করা শুরু হয়।