পর্যটন মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয় পবিত্র রমজান মাস। ফলে পুরো রমজানে জনশূন্য থেকেছে কক্সবাজারের বেলাভূমি। কিন্তু ঈদুল ফিতরের ছুটির বদৌলতে কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম শুরু হয়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে পর্যটক ও দর্শনার্থী উপস্থিতি। আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত এমন পর্যটকের বিচরণ থাকবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, গরম উপেক্ষা করে কক্সবাজার সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় লোকসমাগম বাড়তে থাকে। রমাজানের সুনসান নীরবতা থাকা হোটেল-মোটেল জোনে অটোরিকশার বিচরণ, খাবার ও সৌখিন পণ্যের দোকানগুলো পালা করে খুলছেন ব্যবসায়ীরা। বেড়েছে ফুটপাতের বেচাকেনাও। সৈকতে বেড়েছে বিনোদন সঙ্গী ঘোড়া, বীচ বাইক, জেট স্কিসহ অন্যান্য অনুষঙ্গ।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাব ও ট্যুরস অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, ঈদের ছুটিতে লাখো পর্যটক সমাগম হতে পারে, এ আশায় পর্যটকদের বরণে সৈকত তীরের ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ প্রস্তুত ছিল। এবারের ঈদের ছুটির পর বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আরও একটি ছুটিতে পর্যটক সমাগম হতে পারে এবং এটি দিয়েই চলতি পর্যটন মৌসুম শেষ হবে বলে ধরে নেওয়া যায়।
কক্সবাজার সৈকতের কিটকট (বসার চেয়ার) ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান বলেন, পুরো রমজানে ব্যবসায় খরা পার করেছি। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক পর্যটক আসবে আশা করা যায়। সোমবার (ঈদের দিন) থেকে ব্যবসা ভালো হচ্ছে। যারা সৈকতে ভিড় করছেন তারা শুধু পর্যটক নন, স্থানীয় দর্শনার্থীও রয়েছে। অভিজ্ঞতা বলছে, এবারের ছুটিতে কয়েক লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসবে।
সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হাবিব উল্লাহ বলেন, রমজানের পর্যটক না থাকায় বেচাকেনা হয়নি, তবে ঈদের পরে ব্যবসা জমতে শুরু করেছে।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, সারাবছর পর্যটক উপস্থিতি না থাকলে কক্সবাজারে গড়ে ওঠা পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়েন। পুরো রমজানে সবার লস গেছে। কিন্তু ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পর্যটক সমাগম আশানুরূপ হলে ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কক্সবাজারে আগত পর্যটক বরণে হোটেল মালিকরা একমাস ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন। সারা বছর কম বেশি পর্যটক উপস্থিতি নিশ্চিতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, রমজান মাসে পর্যটকশূন্য থাকার সময়টাতে হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজের সাজসজ্জাসহ সব ধরনের মেরামতে কাজ করে পর্যটক বরণে প্রস্তুতি থাকে। ঈদের দিন থেকে লোকসমাগম বাড়তে শুরু করেছে। সবাই পর্যটক নন।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, রমজানে জনশূন্য থাকলেও ঈদের ছুটিতে পর্যটকের সমাগম বাড়বে সেই ধারণা থেকেই পর্যটক সেবা নিশ্চিতে এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটকদের অতিরিক্ত চাপের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে টুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর রয়েছে। পর্যটকদের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের সতর্ক করা হচ্ছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, সৈকত তীরের তারকা হোটেলগুলো ছাড়া গেস্ট হাউস, কটেজ বা অন্য আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো পুরো রমজানে বন্ধ ছিল। এখন ঈদের পর থেকে পর্যটক-দর্শনার্থী আসা শুরু হয়েছে। এটা টানা কিছু দিন সচল থাকলে রমজান মাসের পর্যটক শূন্যতার ক্ষতি পুষিয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে।