বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত সাম্প্রতিক ‘চিরুনি অভিযানে’ পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় চা শিল্পের দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই অভিযানে বটলীফ চা ফ্যাক্টরির মালিক এবং ক্ষুদ্র প্যাকেটজাতকরণ চা কারখানার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আনা অনিয়মের অভিযোগে জরিমানা সহ দুজনকে আটক করা হয়েছে। চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরে বেশ কিছু চা ফ্যাক্টরিতে চা উৎপাদনের অনিয়ম, নিলাম ছাড়াই অবৈধভাবে চা বিক্রি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং চা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল। এই অভিযোগগুলোর ভিত্তিতেই চা বোর্ড এই অভিযান পরিচালনা করছে।
পঞ্চগড়ে দীর্ঘদিন ধরে চা প্রক্রিয়াজাতকরণ ফ্যাক্টরিগুলোতে নানা ধরনের অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
এই অনিয়মগুলো বন্ধ করতে বাংলাদেশ চা বোর্ড কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সম্প্রতি চালানো ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বেশ কয়েকটি কারখানাকে জরিমানা করা হয়েছে:
এছাড়াও মৌলি টি ফ্যাক্টরিকে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জেলা শহরের তিনটি কুরিয়ার সার্ভিস থেকে প্রায় ৯০ বস্তা অবৈধ চা জব্দ করা হয়েছে। পঞ্চগড় সদর উপজেলায় অবৈধভাবে টি হাউস খুলে চা বর্জ্য বিভিন্ন কোম্পানির মোড়ক নকল করে প্যাকেটজাত করার অপরাধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দুজনকে এক মাস করে জেল দেওয়া হয়েছে। জব্দকৃত অস্বাস্থ্যকর ডাস্ট চাগুলো তাৎক্ষণিকভাবে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
সাজেদা রফিক টি ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী আরিফুজ্জামান ডেইলি ট্রাইবুনালকে জানান, বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক এই অভিযানের পর থেকে পঞ্চগড়ের চা কারখানার মালিকদের মধ্যে সচেতনতা বিরাজ করছে। যারা এতদিন ধরে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবসা করে আসছিলেন, তারা এখন আতঙ্কে রয়েছেন। অন্যদিকে, যারা সৎ এবং নিয়ম মেনে কারখানা পরিচালনা করছেন, তারা এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এই অভিযান অব্যাহত থাকলে চা শিল্পের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে এবং পঞ্চগড়ের চা শিল্পে দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে গুণগত মানের চা উৎপাদন নিশ্চিত হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।
পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান, পঞ্চগড় জেলায় বর্তমানে ২৬টি চা প্রক্রিয়াজাতকরণ ফ্যাক্টরি চালু রয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৩০টি অনুমোদনবিহীন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্যাকেটজাতকরণ চা কারখানা গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় চা শিল্পের মান উন্নয়নে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে টানা তিন দিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চা উৎপাদন করছে বা অনিয়মের মধ্যে ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপসচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাবিনা ইয়াছমিন জানান, চা বোর্ডের নির্দেশনায় পঞ্চগড় জেলার চা প্রক্রিয়াজাতকরণ ফ্যাক্টরি ও ক্ষুদ্র প্যাকেটজাতকরণ চা-কারখানাগুলোর অস্বাস্থ্যকর চা তৈরি ও ফ্যাক্টরি কর্তৃক চা সরবরাহে রাজস্ব ফাঁকিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। চা শিল্পের মান উন্নয়ন ও সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভবিষ্যতেও এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান বাংলাদেশ চা বোর্ডের এই কর্মকর্তা। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আফ্রিদা ইয়াসমিন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সেলিনা আক্তার লিপা, এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খান।