চলচ্চিত্র সংক্রান্ত বিশেষ কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ বোদ্ধার অডিও ভাইরাল হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এফডিসি কেন্দ্রিক চলচ্চিত্রে শিক্ষিত লোক পাওয়া যায়নি, তারা কিছু লিখলে বানান ভুল করে, তাই বাধ্য হয়ে ফ্যাসিস্ট দল থেকে দু-চার জন নিয়েছেন।’ বেশ ভালো কথা। এফডিসি কেন্দ্রিক আমরা মূর্খ, একেবারে গণ্ড মূর্খ। আমাদের ভেতর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর, ব্যারিস্টার, সাবেক উচ্চপদস্থ আমলা যে আছে সেইসব নাই-বা স্বীকার করলাম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীদের কথা নাই-বা বললাম। পরিচালক সমিতি, সহকারী পরিচালক সমিতিতে সদস্য হতে শিক্ষা সনদ লাগার কথা না হয় ভুলেই গেলাম।
তর্কের খাতিরে চাই জানতে। সৃষ্টিশীল কাজে অ্যাকাডেমিক যোগ্যতাটাই কি প্রধান। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কতটুকু শিক্ষিত? নোবেল ও অস্কারজয়ী লেখক, নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ, মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, প্রযুক্তি দুনিয়ায় গুরু স্টিভ জবস, সফল স্থপতি ফ্র্যাংক লয়েড রাইট, স্থপতি-চিন্তাবিদ-আবিষ্কারক বাক মিনস্টার ফুলার, ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ, ডেল ব্র্যান্ডের কম্পিউটার কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী মাইকেল সল ডেল,চলচ্চিত্র অভিনেতা ব্রাড পিট, টুইটারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যাক ডোরসি, ইন্টারনেট কোম্পানি গুগল ও অ্যালফাবেটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ, বিশ্বসুন্দরী ও অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই, আধুনিক মোটর শিল্পের জনক হেনরি ফোর্ড, চার্লি চ্যাপলিনসহ অনেকের নাম বলা যাবে, তাদের জীবন ও কর্মদক্ষতা নিয়ে মেধাবীরা ডক্টরেট করে, অথচ তাদের সেই অর্থে অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট নেই।
না আমি লেখাপড়া না জানার দলে নই। আমি বলতে চাই, এফডিসি বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। এখানে যেমন পিএইচডি করা বিশ্ববিদ্যালয় আছে তেমনি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ মেধাবীরাও আছে। অতি সাধারণও আছে
দূর থেকে ভালো না বেসে এফডিসিতে এসে এককাপ চিনি ছাড়া রং চা খেতে খেতে আমাদের মতো মুর্খদের সাথে একটু কথা বলে আমাদের মূর্খতার পরিমাপ করে যান। ষোল বছরের ভোগীদের মাঝে ট্যালেন্ট না খুঁজে ষোলো বছরের ত্যাগী ও বঞ্চিতদের কথাগুলো শুনে যান। এতে আমাদের নাই-বা কিছু হলো। আপনারা সমৃদ্ধ হবেন। দয়া করে মুর্খ বলে গাল দিবেন না, আপনি কিন্তু সর্বোচ্চ শিক্ষিত কেউ নন। জীবন থেকে নেয়া, আবার তোরা মানুষ হ, গোলাপি এখন ট্রেনে, অরুণোদয়ের অগ্নি সাক্ষী’ ওরা এগারো জন, রূপালী সৈকতে, এগুলো মুর্খদের নির্মিত কিন্তু ইতিহাসের অংশ। ফ্যাসিস্ট সরকার ১০০ কোটি টাকা দিয়ে সিনেমা বানিয়ে জেনেছে এফডিসির মুর্খদের কতটা প্রয়োজন।
শেষে মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত্র আন্দোলনে যখন উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা তখনই নেট জগতে ভাইরাল হয়ে যান রিকশা চালক মোহাম্মদ সুজন। সাধারণ ছাত্রদের ত্যাগকে সম্মান জানাতে তার সমস্ত আবেগ ও দেশপ্রেম ঢেলে স্যালুট দিয়ে সবার মনে জায়গা করে নেন। তার মেধা দিয়ে বাংলাদেশকে জানিয়ে দেন মানুষের অন্য কোনো পরিচয় নেই।
◼️
এবিএম সোহেল রশিদ