ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে যে কজন অভিনেতা শুধু পর্দায় নয়, বাস্তব জীবনেও নায়কের ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম চিত্রনায়ক মান্না। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮-এ তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও তার কর্ম ও মানবিক গুণাবলি আজও লাখো মানুষের হৃদয়ে অমলিন। মান্না শুধু একজন জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন না, তিনি ছিলেন অন্যায়, অবিচার ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে এক আপসহীন কণ্ঠস্বর।
মান্না যখন ইন্ডাস্ট্রিতে দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন, তখন ঢালিউড অশ্লীল সিনেমার কালো থাবায় আক্রান্ত ছিল। তিনি নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে এই অশ্লীলতার বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদ ও আন্দোলন করেছেন। এই পথ সহজ ছিল না। একসময় একজন প্রযোজক তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছিল, তবুও তিনি তার অবস্থান থেকে সরে আসেননি। তার এই প্রতিবাদী মনোভাব ইন্ডাস্ট্রিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এবং অনেক তরুণ নির্মাতা ও শিল্পীকে সঠিক পথে কাজ করতে উৎসাহিত করে।
পর্দার বাইরেও মান্না ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ। তারকাখ্যাতি তাকে তার শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। তিনি ব্যস্ততার মাঝেও তার পরিবার ও শৈশবের বন্ধুদের জন্য সময় বের করতেন। মৃত্যুর আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি তার গ্রামের বন্ধুদের কথা বলেন। সেই বন্ধুরা, যারা হয়তো কেউ চায়ের দোকানদার বা পান বিক্রেতা, তাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল একেবারেই সহজ-সরল। তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ‘আপনি’ সম্বোধন পছন্দ করতেন না, বরং চাইতেন ‘তুই’ বলে ডাকতে, যেমনটা তারা স্কুলজীবনে করত। তিনি তাদের দোকানে বসে সাধারণ মানুষের মতো চা খেতেন, আড্ডা দিতেন। এই দৃশ্যগুলোই প্রমাণ করে, তারকা হয়েও তিনি কতটা সাধারণ ও বিনয়ী ছিলেন।
মান্না বিশ্বাস করতেন, পেশা দিয়ে মানুষের মূল্য বিচার করা যায় না। একজন চায়ের দোকানি বা একজন পান বিক্রেতা, তাদের পেশা যতই সাধারণ হোক না কেন, তা মহৎ। এই মানসিকতা তাকে সাধারণ মানুষের আরও কাছে নিয়ে গিয়েছিল। তার এই বিনয়, সরলতা এবং বন্ধুদের প্রতি ভালোবাসা শুধু তার ভক্তদেরই নয়, সবার জন্যই এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। মান্না চলে গেছেন, কিন্তু তার মতো একজন প্রতিবাদী, মানবিক ও বিনয়ী নায়কের প্রয়োজনীয়তা আজও আমাদের সমাজে অনুভূত হয়।
-লেখক: কবি, সাংবাদিক ও আবৃত্তি শিল্পী