এ বছর টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের আনারস চাষিরা রেকর্ড ফলন এবং দারুণ দামে অত্যন্ত খুশি। কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ৭ হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমিতে আনারসের আবাদ হয়েছে, যার মধ্যে মধুপুরেই ৬ হাজার ৬৩০ হেক্টর। এই বিশাল আবাদ থেকে প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন আনারস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গরমের কারণে বাজারে আনারসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেশ ভালো। এই অনুকূল পরিস্থিতিতে কৃষি বিভাগ এ বছর আনারস থেকে প্রায় ৭৬০ কোটি টাকার বিশাল বাণিজ্য হবে বলে আশাবাদী।
সম্প্রতি মধুপুরের লাল মাটির আনারস ‘জিআই’ (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, যা চাষিদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। এই স্বীকৃতির ফলে এই অঞ্চলের আনারস বিশ্ব দরবারে আরও বেশি পরিচিতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মধুপুরের উর্বর মাটিতে বিভিন্ন জাতের আনারস চাষ হয়। এর মধ্যে ‘জলডুগি’ এবং ‘ক্যালেন্ডার’ জাত প্রধান। এছাড়াও, ‘এমডি-টু’ নামের ফিলিপাইনের একটি জাতও ১৮ হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হচ্ছে।
মধুপুরের সবচেয়ে বড় আনারসের বাজার হলো জলছত্র। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসেন আনারস কিনতে। বর্তমানে ভালো চাহিদা থাকায় এবং প্রচুর পাইকারের আনাগোনায় বাজার অত্যন্ত সরগরম। ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় চাষিরা তাদের উৎপাদন খরচ তুলে বেশ ভালো লাভ করছেন।
স্থানীয় চাষি শাহীন বলেন, “আগের চেয়ে এখন দাম ২-৩ টাকা বেশি পাচ্ছি। পাইকারদের চাহিদা অনেক থাকায় এমন হচ্ছে।” আরেক চাষি সুরুজ আলী জানান, “আনারসের চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফল কাটা পর্যন্ত একটি আনারসে ১৫-১৮ টাকা খরচ হয়। কিন্তু এখন ভালো দাম পাওয়ায় লাভও বেশি হচ্ছে।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আশেক পারভেজ জানান, কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে যাতে তারা ভালো ফলন পান। একইসঙ্গে, তিনি কৃষকদেরকে দ্রুত পাকানোর জন্য অতিরিক্ত হরমোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, তারা এমডি-টু জাতের আনারস বিদেশে রপ্তানির চেষ্টা করছেন।
সব মিলিয়ে, টাঙ্গাইলের মধুপুরের আনারস চাষিরা এবার ফলন ও দাম উভয় ক্ষেত্রেই সাফল্যের মুখ দেখছেন, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে নতুন গতি এনে দিয়েছে।