1. info2@icrbd24.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
  2. admin@icrbd24.com : admin :
রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন
আই জামান চমক

এক জীবনের গুরু জেমস

আই জামান চমক, ঢাকা
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর, ২০২৫

আজকের দিনটি সত্যিই বিশেষ—২ অক্টোবর। কারণ, এই দিনেই বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের জন্ম হয়েছিল। তিনি আমাদের সকলের প্রিয় ‘গুরু’ জেমস। তাঁর পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। তিনি কেবল একজন শিল্পী নন, একটি প্রতিষ্ঠান, একটি আবেগ, আর এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে প্রেরণার এক চলমান উৎস। তাঁর গান আমাদের তারুণ্যের প্রতিবাদের ভাষা, আবার কখনওবা গভীর ভালোবাসার আকুতি।

আমি মনে করি, জেমসের জীবনটাই একটা গানের মতো। তাঁর শৈশব কেটেছে নওগাঁ ও চট্টগ্রামে। সরকারি কর্মকর্তা বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে লেখাপড়া করুক। কিন্তু জেমসের রক্তে ছিল সঙ্গীতের উন্মাদনা, বোহেমিয়ান সুর। তাই বাবার অমতে ঘর ছেড়েছিলেন কিশোর বয়সেই। চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ের ছোট্ট ১২ বাই ১২ ফুটের ঘরে শুরু হয় তাঁর সংগ্রামী জীবন, তাঁর সঙ্গীত সাধনা। এই যে নিজের স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে অনিশ্চয়তার পথে হাঁটা, এ থেকেই তো সৃষ্টি হয়েছে কিংবদন্তী! ১৯৮০ সালে তিনি গড়ে তোলেন ‘ফিলিংস’ (পরবর্তীতে ‘নগর বাউল’) ব্যান্ড। প্রথম দিকের অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ হয়তো সেভাবে সফল হয়নি, কিন্তু তাঁর একক অ্যালবাম ‘অনন্যা’ রাতারাতি তাঁকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেয়। এরপর ‘জেল থেকে বলছি’, ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’, ‘লেইস ফিতা লেইস’— প্রতিটি অ্যালবামই যেন সময়ের দলিল।

তাঁর গানে যে বৈরাগ্য আর আধ্যাত্মিকতার সুর বাজে, তা অনেক সময়েই আমাদের জীবনের গভীর সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। “ভিগি ভিগি”, “চল চলে”-এর মতো হিন্দি গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি শুধু দেশের গণ্ডিই পেরোননি, উপমহাদেশজুড়ে রক মিউজিকের এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেছেন। তাঁর কণ্ঠের শক্তি, গিটারের ঝংকার আর ঝাঁকড়া চুলের বাউণ্ডুলেপনা— এ সবকিছু মিলে জেমস যেন নিজেই একটা দর্শন।

আমি চাই বলতে, জেমস শুধু আমাদের গানই শোনাননি, তিনি শিখিয়েছেন কী করে স্রোতের বিপরীতে হেঁটে নিজের মতো করে বাঁচা যায়। তিনি মানুষ, কোনো দেবতা নন। আর এই মানুষ হিসেবেই তাঁর জীবনে ছিল ভুল, ছিল দুর্বল মুহূর্ত। এই প্রসঙ্গে একটি বহুল আলোচিত ঘটনার কথা আমার মনে পড়ছে। একদিন ঢাকার শেরাটন হোটেলে তাঁর একটি কনসার্ট চলছিল। মঞ্চে উঠে তিনি গাইতে শুরু করলেন, কিন্তু এক লাইন গাওয়ার পরই থেমে গেলেন। তিনি মদ্যপ ছিলেন, তাই হয়তো স্বর আর কথা যেন তাল মেলাতে পারছিল না। এমন পরিস্থিতিতে যখন একজন তারকা নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না, তখন পরিস্থিতি বিড়ম্বনার হতে পারে। কিন্তু সেদিন যা ঘটেছিল, তা কেবলই শিল্পীর প্রতি ভক্তের গভীর ভালোবাসার এক বিরল উদাহরণ।

জেমস যখন গাইতে পারছিলেন না, তখন সমস্ত দর্শক একযোগে গেয়ে উঠেছিল তাঁর প্রিয় গানটি। পুরো হল ভর্তি মানুষ, সবাই মিলে গাইছে, আর তাঁদের প্রিয় শিল্পী দাঁড়িয়ে দেখছেন সেই দৃশ্য। সেদিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি শুধু এতটুকু বলতে পেরেছিলেন— “আজ তোরা আমায় ক্ষমা করে দে। আমি তোদের এই ক্ষমাটা মনে রাখব।” পরে ‘বিচিত্রা’ ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেমস নিজেই স্বীকার করেছিলেন সেই দুর্বলতার কথা। আমি মনে করি, একজন শিল্পীর জন্য এর চেয়ে বড় আর কী-ই বা হতে পারে? ভুল করার পর সেটাকে স্বীকার করা এবং ভক্তদের নিঃশর্ত ভালোবাসা পাওয়া— এটিই জেমসের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। এই ঘটনাই প্রমাণ করে, তারকা হিসেবে তিনি কতটা মাটির কাছাকাছি ছিলেন, আর তাঁর ভক্তরা তাঁকে কতটা আপন করে নিয়েছিল।

তিনি প্রমাণ করেছেন, আবেগ আর সাহস থাকলে যেকোনো বাধাই টপকে যাওয়া যায়। তাই জেমস মানেই কেবল গান নয়, জেমস মানে এক ধরনের জীবনবোধ

এই কিংবদন্তী শিল্পীর জন্মদিনে, আমার মনে হয়, তাঁর গানের মতোই তাঁর জীবনটাও উদ্‌যাপনের যোগ্য। তিনি চিরসবুজ, তিনি চিরতরুণ। শুভ জন্মদিন, গুরু! আপনি যুগ যুগ ধরে আমাদের সঙ্গীতের বাতিঘর হয়ে থাকুন।

-লেখক: কবি, সাংবাদিক, আবৃত্তিকার ও বাচিক শিল্পী

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
All rights reserved © 2013- 2025