এই যে মানুষ! কত চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তার পথ চলা। সকাল আসে, দিন কাটে, রাত নামে—কিন্তু আমরা কি একবারও থমকে দাঁড়াই? একবারও কি নিজেকে প্রশ্ন করি, কী ছিলাম, কী হতে চাই আর কোথায় দাঁড়িয়ে আছি? আসলে, সবকিছুর উত্তর একটাই—যা তুমি ভাবছো, তুমি তাই হবে। জীবনের এই কঠিন এবং মিষ্টি সত্যটা যেদিন তুমি হৃদয় দিয়ে অনুভব করবে, সেদিন আর তোমাকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না, বন্ধু।
দেখো, চারপাশে চেয়ে দেখো। এই যে আমাদের রাজনৈতিক ময়দান, কিংবা অর্থনীতির ঘোলা জল—কোথায় নেই মানুষে মানুষে বিভেদ, কোথায় নেই হতাশায় ডুবে থাকা একদল প্রাণ? কেন এমন হয়? কারণ, অধিকাংশ মানুষই একটি আরামদায়ক অজুহাতের চাদর গায়ে জড়িয়ে নেয়। “আমার ভাগ্যটাই খারাপ,” “সুযোগ পেলাম না,” “অমুক আমার ক্ষতি করেছে”—এই অজুহাতগুলো হলো এক-একটি আত্মঘাতী বোমার মতো, যা তোমার ভেতরের সম্ভাবনাকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়।
তুমি যখন অজুহাত খুঁজতে শুরু করবে, তখন তোমার মন তোমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু থেকে হয়ে উঠবে সবচেয়ে বড় শত্রু। মন কেবলই প্রমাণ করবে, কেন তোমার পক্ষে বড় হওয়া সম্ভব নয়। আমি বলি কী, তুমি অজুহাত নয়, বরং সমাধানের রাস্তা খোঁজো। কারণ, অজুহাতের এই অভাবের দেশে, অজুহাতের সত্যিই কোনো অভাব হয় না। একটি অজুহাত তোমাকে আরেকটি অজুহাতের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। এবং এই টানাপোড়েনে তোমার জীবনটা কেবলই স্থবির হয়ে যাবে, যেমন হয় পুরনো দিনের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির মতো।
অথচ, জীবন কিন্তু থেমে থাকে না। তুমি যদি সত্যিই বড় কিছু হতে চাও, যদি তোমার বুকের ভেতর থাকে সেই তাগিদ, তবে তোমার চিন্তাই তোমার কাছে পথ খুলে দেবে। একজন কবির কথাই ধরো—কবিতার ভেতরের সুর, শব্দের গাঁথুনি—এসব তো কেবলই তাঁর ভেতরের গভীরতম ভাবনারই প্রতিফলন। যে মানুষটি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে সে একজন ভালো মানুষ হবে, তার কাজ, তার ব্যবহার, তার নৈতিকতা—সবকিছুতে সেই প্রতিজ্ঞার ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কারণ, তোমার ভেতরের চিন্তাগুলোই হলো আসল কারিগর, তারাই তোমার জীবনের দালান তৈরি করে।
আমরা এই দেশের মানুষ, দিনের পর দিন কত ঝড়-ঝাপটা পার করেছি। কিন্তু যারা হাল ছাড়েননি, যারা বিশ্বাস করেছেন—এই দেশ একদিন আলোর মুখ দেখবেই, তারাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়েছেন। তাদের স্বপ্নই আজকের বাস্তব বাংলাদেশ। অতএব, তোমার চিন্তা যদি থাকে ছোট, সংকীর্ণ, তবে তোমার কাজও হবে তেমনই দুর্বল, ভিত্তিহীন। আর যদি তোমার চিন্তা হয় আকাশছোঁয়া, মহৎ, তবে দেখবে তোমার হাত, তোমার পা, তোমার মস্তিষ্ক—সবকিছুই সেই লক্ষ্য পূরণে মগ্ন। তোমার প্রতিটি কর্ম তখন হবে এক-একটি বিপ্লবী ইশতেহারের মতো।
আমি বিশ্বাস করি, আমরা প্রত্যেকেই আমাদের জীবনের কান্ডারি। আমাদের হাতেই আছে সেই অদৃশ্য কলম, যা দিয়ে আমরা আমাদের ভাগ্য লিখতে পারি। কলমের কালি হলো আমাদের চিন্তার শক্তি। তাই, আর দেরি নয়। আজই ঠিক করো, তুমি কী হতে চাও—অজুহাতগ্রস্ত এক ব্যর্থ মানুষ, নাকি আত্মবিশ্বাসী এক বিজয়ী। কারণ, তোমার চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে তোমার কাজে। আর তোমার কাজই নির্ধারণ করে দেবে—তুমি আসলে কে! –
লেখক: কবি, সাংবাদিক, আবৃত্তিকার ও বাচিক শিল্পী