যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি, এমনকি বড় বড় রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেও এই কথাটি সমানভাবে প্রযোজ্য। বিশ্বের বহু বড় রাজনৈতিক দল এবং বৃহৎ কর্পোরেশন সময়ের প্রয়োজনে তাদের লোগো পরিবর্তন করেছে। এই পরিবর্তন মূলত আধুনিকতা, নতুন লক্ষ্য এবং পরিবর্তিত সময়ের প্রতিচ্ছবি। যদি কেউ সময়ের সাথে নিজেকে বা নিজের প্রতিষ্ঠানকে আপডেট না করে, তবে অনিবার্যভাবেই সে পিছিয়ে পড়ে।
লোগো বা প্রতীক হলো একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি, তার উদ্দেশ্য এবং আদর্শের নীরব ভাষা। এটি স্থির কোনো বিষয় নয়, বরং গতিশীল। মানুষের রুচি ও ডিজাইন-ধারণা যেমন পাল্টায়, তেমনি প্রতিষ্ঠানের লোগোও পরিবর্তিত হয়। এটি একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ও সাধারণ ঘটনা, যা কোনো দলের বা প্রতিষ্ঠানের যাত্রাপথে নতুনত্বের ইঙ্গিত দেয়।
আমি মনে করি, সময়ের প্রয়োজনেই জামায়াতে ইসলামী তাদের লোগো পরিবর্তন করেছে। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে সময়ের দাবি মেনে এই ধরনের পরিবর্তন আনা খুবই স্বাভাবিক। এখন কেউ যদি এই পদক্ষেপকে স্বাগত নাও জানায়, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এটিকে পুঁজি করে ভুলভাল ব্যাখ্যা দিয়ে বা অযৌক্তিক কথা বলে সমালোচনা করা কতটা যৌক্তিক? আমি বলতে চাই, একটি লোগো পরিবর্তনকে অতিমাত্রায় গুরুগম্ভীর বা সমালোচনার বিষয় হিসেবে না দেখে, এটিকে একটি স্বাভাবিক সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত অনেক কোম্পানি যেমন অ্যাপল, পেপসি, স্টারবাকস—এরা প্রত্যেকেই তাদের যাত্রাপথে একাধিকবার লোগোর নকশা বদলেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রেও এমন বহু উদাহরণ আছে। এই পরিবর্তনগুলো কোনো দুর্বলতা নয়, বরং সময়ের দাবি মেটানোর একটি প্রচেষ্টা। ঠিক যেমন একজন মানুষ নতুন পোশাক পরে বা তার ঘরের সজ্জা পাল্টে ফেলে, তেমনি একটি দলও সময়ের সাথে তার দৃশ্যমান প্রতীককে নতুন রূপে সজ্জিত করে। এটি তাদের অগ্রযাত্রারই একটি অংশ।
আমি অনুভব করি, এই ধরনের পরিবর্তনকে নেতিবাচকভাবে দেখার প্রবণতা থেকে আমাদের সরে আসা উচিত। সুস্থ রাজনীতি ও গঠনমূলক সমালোচনার জন্য এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে অযথা বিতর্কের কেন্দ্রে না এনে, তাদের নতুন লোগোর মাধ্যমে দলটির ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা কী হতে পারে, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
-লেখক: কবি, সাংবাদিক, আবৃত্তিকার ও বাচিক শিল্পী