রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকারের অভিযোগ তুলে লাইসেন্স ফিরে পেল সিটিসেল
দেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেল (প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড- পিবিটিএল) তাদের লাইসেন্স ও তরঙ্গ বরাদ্দ ফেরত পেয়েছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ২০১৬ সালে তাদের কার্যক্রম জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
বিএনপির সাবেক সিনিয়র নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের পরিবারের সংশ্লিষ্টতা থাকায় সিটিসেল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয় বলে অভিযোগ করা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর কাছে জমা দেওয়া আবেদনপত্রে বলা হয়েছিল, বিগত আট বছর ধরে পক্ষপাতদুষ্ট ও অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সিটিসেল বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এমনকি নির্ধারিত সময়ে বকেয়া পরিশোধের পরও কোম্পানির মালিকানায় ভিন্ন মতের রাজনৈতিক ব্যক্তির অংশ থাকায় বিটিআরসি ক্ষমতার অপব্যবহার করে তরঙ্গ বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার সিটিসেলের পরিষেবা জোরপূর্বক বন্ধ করে দেয়। এর পেছনে তৎকালীন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বিশেষ ভূমিকা রাখেন বলেও অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
বিটিআরসির বক্তব্য অনুযায়ী, ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে, পরে সিটিসেল ২৪৪ কোটি টাকা পরিশোধ করে। আদালতের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে দেখা যায়, সিটিসেলের কাছে সরকারের সর্বশেষ মোট বকেয়ার পরিমাণ ছিল ১২৮ কোটি টাকা।
পিবিটিএলের হেড অব রেগুলেটরি ও কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স নিশাত আলি খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিটিসেলের নেটওয়ার্ক বন্ধ করা হয়েছিল। লাইসেন্স ফিরে পাওয়ায় আমরা খুব শিগগিরই গ্রাহক সেবায় ফিরতে পারবো।’ তিনি আরও জানান, লাইসেন্স ফেরত পাওয়ার পর আধুনিক প্রযুক্তি যেমন জিএসএম, ৪-জি, ৫-জি ব্যবহার করে তারা গ্রাহক সেবায় ফিরতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং স্বল্প লাভে সেবা নিশ্চিতের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।
এদিকে, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বর মাসের আগেই বানিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করবে সিটিসেল।
সিটিসেল ফেরার খবরে নেটিজেনদের মধ্যে বেশ উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। তবে, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, গ্রাহক সেবায় ফিরতে হলে সিটিসেলকে অবকাঠামোগত প্রস্তুতিসহ অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সিটিসেল ফিরলে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর মধ্যে একমাত্র দেশীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি হবে, যা গ্রাহক সেবার জন্য ভালো।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে সিটিসেল দেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং দেশের মানুষকে প্রথম মোবাইল ফোন সেবা দিয়ে প্রযুক্তিগতভাবে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিল।