মানুষ মরণশীল—এ এক অমোঘ সত্য। জন্ম নিলে মৃত্যু সুনিশ্চিত। তবে কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা এই নশ্বর পৃথিবীতে শারীরিক বিদায় নিলেও তাঁদের কর্ম, আদর্শ আর সততার আলোয় বেঁচে থাকেন যুগ যুগ ধরে। পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও পঞ্চগড় ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মোজাহার হোসেন তেমনই একজন ব্যক্তিত্ব। ২০১৬ সালের এই দিনে তিনি হাজার হাজার নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ, তাঁর হাতে গড়া ছাত্র-ছাত্রী এবং পরিবারের সদস্যদের কাঁদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। কিন্তু আজও মানুষ তাঁকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, কারণ তাঁর রেখে যাওয়া শিক্ষা ও আদর্শ এখনো দেদীপ্যমান।
আমি মনে করি, মোজাহার হোসেন রাজনীতিকে কেবল ক্ষমতা কিংবা পদ-পদবি অর্জনের মাধ্যম হিসেবে দেখেননি; তিনি রাজনীতি করেছেন মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য। তাঁর মূল অর্জন ছিল ক্ষমতা নয়—সাধারণ মানুষের নির্মল ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ বারবার দেখা গেছে ভোটের মাঠে। ধর্ম, জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষ তাঁকে বারবার ভোটের ময়দানে বিজয়ী করেছে। তিনি সাধারণ মানুষের বুকে আগলে রেখেছিলেন, নিজের জীবন-যৌবনের সবটুকু সময় ঢেলে দিয়েছিলেন তাদের সেবায়। এই যে নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ, এই যে মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা—এটাই তাঁকে অমর করে রেখেছে।
আমার মনে হয়, মোজাহার হোসেনের মতো নেতারা প্রমাণ করে যান, সততা আর নিষ্ঠা হলো রাজনীতিতে সফলতার মূল ভিত্তি। তিনি তাঁর সংস্পর্শে আসা মানুষদের যে সততা ও নিষ্ঠার শিক্ষা দিয়ে গেছেন, তা আজও তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সত্যিকারের নেতা তিনিই, যিনি চলে যাওয়ার পরও তাঁর কর্ম দিয়ে মানুষের হৃদয়ে অক্ষয় আসন গড়ে নেন। মোজাহার হোসেনদের আসলে মৃত্যু নেই। তাঁরা তাঁদের আদর্শ, কর্ম এবং মানবিকতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনে বেঁচে থাকেন হাজারো বছর। এ যেন সেই চিরন্তন সত্যের প্রতিচ্ছবি—‘কীর্তিমানের মৃত্যু নাই’।
তাঁর এই মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে আজ তাঁকে স্মরণ করছি। তাঁর কর্মমুখর জীবন, সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর ত্যাগ এবং তাঁর সুমহান আদর্শ আমাদের জন্য চিরদিন অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। আমরা আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করি, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ মাকামে স্থান দান করুন।
-লেখক: কবি, সাংবাদিক, আবৃত্তিকার ও বাচিক শিল্পী