Header Border

ঢাকা, বুধবার, ২২শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল) ২৫.৯৬°সে
শিরোনাম :
ডিমলায় ভিক্ষুক পুনবার্সনের লক্ষ্যে উপকরন বিতরন অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধুকে হত্যা দায়ে কুষ্টিয়ার যুবকের মৃত্যুদন্ড কুষ্টিয়া কুমারখালীতে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত ডিমলায় আইন-শৃংখলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত পঞ্চগড়ে সংঘর্ষের ঘটনায় ৬ মামলায় আটক ৮১ তিস্তার ভূ-উপরিস্থ পানি সম্পদের যথার্থ ব্যবহার ও সংরক্ষণে মতবিনিময় কর্মশালা অনুষ্ঠিত আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হল পঞ্চগড় জেলা ইজতেমা ইজতেমা থেকে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এক আজ থেকে শুরু ৩ দিন ব্যাপি বাউল সম্রাট লালন স্মরণোৎসব বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) আলু ফসলের প্রদর্শনী প্লট ও মাল্টি লোকেশন পারফরমেন্স

পঞ্চগড়ে ভীনদেশী ফুল টিউলিপ ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা : যেন একখণ্ড নেদারল্যান্ড

শেখ ফরিদ।।

সমতলের চা ও কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্যের পর উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এখন মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শীত প্রধান দেশের নজরকাড়া ফুল টিউলিপ। ভিনদেশি টিউলিপের সৌন্দর্যে মুখরিত হয়ে উঠেছে উপজেলার দর্জিপাড়া গ্রাম। প্রায় দুই একর জায়গা রাঙানো ১০ রঙের টিউলিপ ফুলের উদ্যান যেন একখন্ড নেদারল্যান্ড। এ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেড়েছে পর্যটক সমাগমও। পর্যটনে যুক্ত হয়েছে নতুনমাত্রা।

এবার ২০ জন উদ্যোক্তা নিয়ে চাষ হয়েছে টিউলিপ। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভলপমেন্ট (ইফাদ)’র সহযোগিতায় দেশের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)’র মাধ্যমে পাইলট প্রকল্পে চাষ করা হচ্ছে বিদেশি ফুল টিউলিপ।

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি মহান মাতৃভাষা দিবস এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিক এই ফুলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার (১৩ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই একর জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা বাগানের এক লাখ গাছে দুলছে বাহারি রঙের ১০ প্রজাতির রাজসিক টিউলিপ। বাগানের ঠিক মাঝখানে সবুজ গমের চারার মাঝে টিউলিপ ফুটিয়ে দেয়া হয়েছে জাতীয় পতাকার রূপ। এসব ফুল যেমন সৌন্দর্য বর্ধন করছে, তেমনি ছড়াচ্ছে মুগ্ধতাও। আর উদ্যোক্তারা দেখছেন অর্থনীতিক সমৃদ্ধির স্বপ্ন। পর্যটকে মুখরিত বাগানে সবাই যেন ব্যস্ত ফটোসেশনে। টিউলিপ ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের এখানে ঘুরতে এসে যাতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয় সেজন্য এখানেই ইকো ট্যুরিজমের মাধ্যমে থাকা-খাওয়ার হোটেল ব্যবস্থাও রয়েছে।

এদিন বিকেলে টিউলিপ পাইলট প্রকল্প নিয়ে সাংবাদিকদের অবহিতকরণ করেছেন ইএসডিও’র পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার। তিনি বলেন, ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া পর্যটনে অপার সম্ভাবনাময় এলাকা। হিমালয় কন্যাখ্যাত এ জেলার তেঁতুলিয়ায় আমরা ইকো ট্যুরিজম গড়ে তুলতে ভিনদেশি টিউলিপ ফুলের চাষ ‘পাইলট প্রকল্প’ গ্রহণ করেছি। টিউলিপ ভিনদেশি নেদারল্যান্ডের উচ্চ মূল্যের দামি ফুল। পর্যটন এলাকায় টিউলিপ ফুলের বাগান সৃষ্টি হওয়ায় পর্যটনের আকর্ষণও বেড়েছে। দেশ বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এসে বাহারি রঙের টিউলিপ ফুল দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। কেউ সেলফি তুলছেন। আবার কেউ ফুল কিনছেন।

ড. সেলিমা আখতার আরও বলেন, টিউলিপ চাষে এবার ব্যয় হয়েছে ৮০ লাখ টাকা। বাল্ব বা চারার দাম, শেড নেট, ফেন্সিং নেট, রাসায়নিক সার, জৈবসার, কীটনাশক ও শ্রমের মূল্য ধরেই এই ব্যয় হয়েছে। গত ১০ জানুয়ারি এক লাখ টিউলিপ ফুলের বাল্ব (বীজ) রোপণ করা হয়। রোপনের ১৫-১৬ দিনেই চারা গজিয়ে কলি ফুটে। টিউলিপ ফুল উৎপাদন করে ফুলের জগতে অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে উৎপাদিত প্রতিটি ফুল বাগান থেকে ৫০ টাকা দরে স্থানীয়ভাবে বিক্রি শুরু করা হচ্ছে। ফুল বাগানে ক্ষুদ্র পরিসরে বিনোদন পার্ক তৈরি করে পর্যটক ও ফুলপ্রেমিদের জন্য প্রবেশ মূল্য চালু করা হয়েছে। এতে করে ফুল বিক্রি বাদেও তারা অতিরিক্ত টাকা আয়ের সম্ভাবনাও রয়েছে।

মুগ্ধ পর্যটকরা বলছেন, ফাগুনের আগমনে বসন্ত রাঙাচ্ছে নেদারল্যান্ডের ফুটন্ত টিউলিপ। যেন আমরা কাশ্মীর বা নেদারল্যান্ডে আছি। বাহারি রঙের টিউলিপের সৌন্দর্য আমাদেরকে মোহিত করছে। দেশের মাটিতে এরকম বাণিজ্যিক আকারে শীত প্রধান দেশের এমন দামি ফুল চাষ হবে ভাবাই যায় না।

সুমি আক্তার, মনোয়ারা খাতুন, আয়েশা সিদ্দিকাসহ কয়েকজন উদ্যোক্তা বলেন, প্রথমবারের মতো গত বছর আমরা প্রান্তিক ৮ জন নারী মিলে এ অঞ্চলে নেদারল্যান্ডের রাজকীয় টিউলিপ ফুটিয়ে ছিলাম। এ অঞ্চলে টিউলিপ চাষ করে আমরা যেমন সফল হয়েছিলাম তেমনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছিলাম। এছাড়া টিউলিপ ফুল দেখতে এ অঞ্চলে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটেছিল। আশা করছি এবারও টিউলিপের দৃষ্টি নন্দন সৌন্দর্য ও হাসিতে মুগ্ধ করবে।

জানা গেছে, টিউলিপ ফুল চাষ করতে হলে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে উত্তরের এ উপজেলায় বরফের পর্বতযুগল হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা কাছে থাকায় এখানে বেশ সময় শীত থাকে। এরকম শীতে টিউলিপ চাষে সুবিধা রয়েছে।

এর আগে, গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে দর্জিপাড়া ও শারিয়ালজোত গ্রামে ৮জন প্রান্তিক নারী কৃষাণীদের নিয়ে ৬ প্রজাতের ৪০ হাজার টিউলিপ চাষ শুরু করা হয়। প্রথমবারেই টিউলিপ ফুটিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলে নারীরা।

দ্বিতীয়বারের মতো এবার বাণিজ্যিকভাবে ২০ জন নারী কৃষাণীদের হাতে প্রস্ফুটিত হচ্ছে ১০ প্রজাতের নজরকাড়া টিউলিপ। সেগুলো হলো- অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ সানরাইজ (হলুদ), ষ্টংগোল্ড (হলুদ),জান্টুপিঙ্ক (গোলাপী), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিষ্টিকভ্যান ইজক (গোলাপী), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল ছায়া) এবং গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)।

উল্লেখ্য, টিউলিপ শীত প্রধান অঞ্চলের ফুল। যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘টিউলিপা’। এটি নেদারল্যান্ডস’র ফুল। যা অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ। এটি বাগানে কিংবা কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়। ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখার জন্য এর আবেদন অনন্য। বর্ষজীবী ও কন্দযুক্ত প্রজাতির এ গাছটি লিলিয়াসিয়ে পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের অসংখ্য সংকর রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিডসহ এর সব প্রজাতিকেই সাধারণভাবে টিউলিপ নামে ডাকা হয়। শীতপ্রধান দেশের বসন্তকালীন ফুল হিসেবে পরিচিত।

তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তেঁতুলিয়ার মাটিতে ভিনদেশি ফুল, সবজি ও ফল চাষ হচ্ছে। বিদেশি ফুল টিউলিপ চাষে এ অঞ্চলে পর্যটনে নতুনমাত্রা তৈরি করেছে। সেই সাথে টিউলিপ চাষে ২০ নারী চাষিদের অর্থনীতি সমৃদ্ধি ঘটছে। কৃষি অফিস সব সময় পাশে আছে। আগামীতে টিউলিপ চাষ আরও বড় আকারে সম্প্রসারিত করা হলে অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক এবং পর্যটনে সমৃদ্ধ ঘটবে বলে আশা করছি।

 

 

 

 

 

 

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

ইবিতে এরা ছিলো অপ্রতিরোধ্য
ডিমলায় ইমাম মুয়াজ্জিনদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
বাংলার সমৃদ্ধি’র ভবিষ্যৎ নিয়ে ‘অনিশ্চয়তা’
হানিফ ফ্লাইওভারে গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজি করতেন তারা
জঙ্গিবাদ নির্মূলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
৭৪৯ জনকে চাকরি দেবে বিমান বাংলাদেশ

আরও খবর