কক্সবাজারের চকরিয়ায় ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত মিজানুর রহমানকে (৪২) কারাগারে শ্যোন অ্যারেস্ট করা হয়েছে। হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে কৌশলে ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের হাতে ধরা দিয়ে কারাগারে যাওয়ার পরও তিনি লুকাতে পারেননি।
পটিয়া থানা পুলিশ তাকে ১৪ জানুয়ারি মাদক মামলায় কারাগারে পাঠায়। আর ১৫ জানুয়ারি তাকে লতিফ হত্যা মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট করা হয় বলে জানিয়েছেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গণি।
ঘাতক মিজান ঝালকাঠি সদর উপজেলার বালকদিয়া বিনয় কাঠি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মৃত জলিল আকনের ছেলে।
নিহত ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহ (৩৬) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের সুফিপাড়া এলাকার মৃত ইলিয়াছ সওদাগরের ছেলে ও চকরিয়া পৌর শহরের হাইস্কুল সড়কের কোমল পানীয়সহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসায়ী ও বিকাশ এজেন্ট।
ঘটনার পর গত শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে পৌরশহরের চিংড়ি চত্বর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় হত্যাকাণ্ডে সন্দেহজনক আসামি মো. নয়নকে (৩০)। তিনি চকরিয়া পৌরশহরের নামার চিরিঙ্গা ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মুজিবুর রহমানের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাইস্কুল সড়কের পাশে লতিফ উল্লাহর কোমল পানীয়সহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বিকাশ এজেন্টের দোকান। গত ৩ জানুয়ারি রাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার আগে একদল দুর্বৃত্ত তার দোকানে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন লতিফকে উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেখানে মিজানও অংশ নেয় বলে জানতে পারে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ঘাতক মিজান ব্যবসায়ী লতিফ হত্যা মামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ‘খ সার্কেল’ পটিয়ার হাতে ধরা দিয়ে মাদক মামলায় জেলে যেতে অভিনব ফন্দি আটে। তার ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল সেটও বন্ধ রাখে। ফন্দি মতে, গত ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ৫০০ পিস ইয়াবাসহ ধরা দেয় মিজান। পরে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দিয়ে পটিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়।
মামলাটি দায়ের করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিদর্শক মুহাম্মদ খোরশেদ আলম। লতিফ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত মিজানকে গ্রেফতার করতে র্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তার দুইটি মোবাইল ট্র্যাকিং করছিলো। তার সর্বশেষ লোকেশন পাওয়া যায় পটিয়া থানায়।
চকরিয়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মুহাম্মদ জুয়েল ইসলাম বলেন, নয়নকে জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। ঘাতক মিজানের নম্বরে লতিফ উল্লাহর বিকাশ এজেন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকার লেনদেনও হয়। এরপর ওই এলাকার বিভিন্ন সিসি টিভির ফুটেজ ও মিজানের ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল সেটের কল রেকর্ডের সূত্র ধরে প্রধান কিলার হিসেবে মিজানকে গ্রেফতারে পুলিশসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মাঠে নামে।১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত তার মোবাইলের সর্বশেষ লোকেশন পটিয়া থানায় নিশ্চিত করে র্যাব।
খবর নিয়ে জানতে পারে পটিয়া থানা পুলিশ তাকে মাদক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে পাঠিয়েছে। সেটা জানার পর ১৫ জানুয়ারি বিকেলে লতিফ হত্যাকাণ্ডের ঘাতক হিসেবে চকরিয়া থানা পুলিশ মিজানকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখায়।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গণি বলেন, মিজানকে লতিফ হত্যা মামলায় শিগগিরই চকরিয়া আদালতে এনে রিমান্ড চাওয়া হবে। এরপরই হত্যার আসল রহস্য উদঘাটন হবে বলে আশা করছেন ওসি।