কুষ্টিয়া শহরে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে চিত্র সাংবাদিক ইমরান হোসেনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা ও বেধড়ক মারধর করার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের গেটের সামনে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেন কুষ্টিয়ার সাংবাদিকরা।
এ সময় তারা দোষীদের আইনের আওতায় আনতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। অন্যথায় কঠিন কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানান তারা।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে চিত্র সাংবাদিক ইমরান হোসেনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করা হয়। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘রবিবার সকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক ইমরানের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যেন আগামীতে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়। দেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিভিন্ন সময় এই ধরনের হামলার বিচার না হওয়ায় ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। দোষীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে যাতে সাংবাদিকরা নির্বিঘ্নে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারেন।’ এ সময় সাংবাদিক ইমরানের ওপরে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করা না হলে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আল মামুন সাগর বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের সামনে ন্যক্কারজনক হামলার শিকার হয়েছেন চিত্র সাংবাদিক ইমরান। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অনতিবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। চিহ্নিত হামলাকারীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারে তাহলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও দৈনিক সংবাদের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি মিজানুর রহমান লাকী, বাংলাভিশনের প্রতিনিধি হাসান আলী, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ এম লিটন-উজ জামান, দৈনিক সময়ের কাগজ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি নূরন্নবী বাবুসহ জেলায় কর্মরত বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিকবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, রবিবার সকালে কুষ্টিয়া শহরের ফুলতলা এলাকায় প্রতীতি বিদ্যালয়ের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্র ইব্রাহিম (৬) নিহত হয়। এতে তার দাদি আহত হন। এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে যান চিত্র সাংবাদিক ইমরান হোসেন। স্থানীয় দৈনিক খবরওয়ালা পত্রিকার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে লাইভ করছিলেন ওই সাংবাদিক। এ সময় দুর্বৃত্তরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে ইমরানের নাক, পিঠ ও মাথা কেটে রক্তাক্ত জখমের করে। ‘মেঘ না চাইতেই জল’ স্লোগান দিয়ে দিয়ে তারা তাকে মারধর করে। যার একটি ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এ ছাড়াও ইমরান হোসেনের সঙ্গে থাকা অফিসের প্যানাসনিক পিভি-১০০ মডেলের ভিডিও ক্যামেরা এবং ক্যামেরার বয়া (মাইক্রোফোন) ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর বাংলা টিভির ক্যামেরাপারসন আলিমসহ অনান্য সাংবাদিকরা ইমরানকে উদ্ধার করেন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। হামলায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।’