জামালপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে দুর্নীতির মূল হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত হোয়াইট বাবুর বিরুদ্ধে উঠেছে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ। নারিকেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে সাংবাদিককে হুমকি, মিথ্যা মামলা এবং এমনকি অফিসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সামনে সাংবাদিকদের অফিসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির মতো ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার এই ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
ঘটনার সূত্রপাত, যখন কয়েকজন সাংবাদিক জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কাছে তার দপ্তরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য নিতে যান। প্রকৌশলীকে অফিসে না পেয়ে সাংবাদিকরা অফিসের অ্যাকাউন্টেন্ট আমিনুল ইসলামের কাছে জানতে চান, প্রকৌশলী কখন অফিসে আসবেন। এই স্বাভাবিক জিজ্ঞাসাকে কেন্দ্র করেই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, অ্যাকাউন্টেন্ট আমিনুল ইসলামের অফিস কক্ষে আকস্মিকভাবে প্রবেশ করেন হোয়াইট (বাবু) নামের এক ব্যক্তি। সেখানে উপস্থিত অফিস সহায়ক, অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ঠিকাদারদের সামনে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলেন এবং জীবননাশের হুমকি দেন। শুধু তাই নয়, তিনি অ্যাকাউন্টেন্ট আমিনুল ইসলামের দিকে আঙ্গুল তুলে সাংবাদিকদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “এই অফিসে সাংবাদিক ঢুকতে দিয়েছে কে? আজ থেকে এই অফিসে সাংবাদিক প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এরপর থেকে কোনো সাংবাদিক ভুল করেও যদি এই অফিসে আসার চেষ্টা করে, তাহলে তাকে কিভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে হয়, তা আমি খুব ভালো করেই জানি।” পরবর্তীতে, সাংবাদিককে অজ্ঞাত নম্বর থেকে বিএনপি’র একাধিক নেতার পরিচয়ে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
হোয়াইট বাবুর বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এখানেই থেমে থাকেনি। বেশ কিছুদিন আগে জামালপুর শহরের ল কলেজ থেকে ভোকেশনাল মোড় এলাকায় কিরণের বোন মিমের (ছদ্মনাম) সাথে মিথ্যা প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে তার শারীরিক চাহিদা মেটাতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মিম প্রথমে হোয়াইট বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাইলেও, সম্প্রতি অন্য একটি ছেলের সাথে তার বিয়ে হওয়ায় তিনি পিছিয়ে যান। তবে, সম্প্রতি গণমাধ্যমে হোয়াইট বাবুর দুর্নীতির খবর মিমের নজরে এলে, তিনি তার এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে চান। মিমের প্রতিবেশী ওসমান (ছদ্মনাম) জানান, হোয়াইট বাবুর বিরুদ্ধে কথা বললে মিমের নতুন সংসার ভেঙে যেতে পারে।
ওসমান আরও অভিযোগ করেন যে, হোয়াইট বাবু একাধিক মেয়েকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ করেন, যেন কোনোভাবেই হোয়াইট বাবু বিষয়টি টের না পান, কারণ শহরে তার অনেক প্রভাবশালী নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে এবং তিনি তাদের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারেন। এই ভয়ে অনেক ভুক্তভোগী মেয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জামালপুরের সাংবাদিক সমাজ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং হোয়াইট বাবুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হোয়াইট বাবু দীর্ঘদিন ধরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের বিভিন্ন দুর্নীতির সাথে সরাসরি জড়িত এবং প্রকৌশলীর ছত্রছায়ায় তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তার এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এবং সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে গিয়ে এমন হুমকির শিকার হওয়ায়, বিষয়টি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে দেখছেন। এ ব্যাপারে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে সাংবাদিক মহল জানিয়েছে।
পরবর্তীতে হোয়াইট বাবুর আরও দুর্নীতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে।